ধ্যানে-জ্ঞানে "পিচওয়াই"!
"আত্মার মাঝে খুঁজে পেলাম, ঈশ্বরের ধ্যান,
এ ধ্যানে পাওয়া যায় জীবনের জ্ঞান।"
একটা সমগ্র চিত্রকলা কেবলমাত্র একজনকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ভাবা যায়? হ্যাঁ, বাস্তবের মাটিতে পা রাখলে একটু খুঁজে দেখলেই পাওয়া যাবে পিচওয়াই চিত্রকলাকে, যার ধ্যান-জ্ঞান বলতে একজনই, সে হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এতদিন ছবি আঁকা ছিল মূল বিষয়বিস্তু। কিন্তু, এই চিত্রকলার মূল বিষয় ছবি আঁকার পাশাপাশি ভক্তিও বটে! সুতরাং, আজকের আলোচনার বিষয় রাজস্থানের আধ্যাত্মিক চিত্রকলা "পিচওয়াই"!
৪০০ বছরের পুরোনো এই পিচওয়াই-এর জন্ম হয়েছিল রাজস্থানের নাথদ্বারা শহরে। 'পিচওয়াই' কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ হলো 'যা পিছন থেকে ঝুলে থাকে এমন' । এই চিত্রকলায় সাধারণত কাপড়ের মধ্যে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং তাঁর জীবনচিত্রের ছবি আঁকা হয় নানান প্রানবন্ত রঙ যেমন খনিজ, উদ্ভিদ থেকে পাওয়া প্রাকৃতিক রঙ-এর সাহায্যে। বর্তমানে এই চিত্রকলা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এটি শুধুমাত্র এখন কাপড়েই নয় কাগজ, ক্যানভাস ও সিল্ক জাতীয় বিবরণে আঁকা হয়ে থাকে। এই চিত্রকলা ভারতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষার্থে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে, কারণ এই চিত্রকলার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো শ্রী কৃষ্ণ। রাজস্থানের নাথদ্বারার শ্রীনাথজি মন্দিরের দেয়ালগুলিকে সাজানোর জন্য এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য এই চিত্রকলাটি ব্যবহার করা হয়। ছবিগুলি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জীবনের অসংখ্য ঘটনাকে চিত্রিত করে। শ্রী কৃষ্ণের জীবনের প্রত্যেকটি অধ্যায়কে সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলে এই চিত্রকলাপিচওয়াই চিত্রকরেরা শ্রীকৃষ্ণের জীবনের এক একটি অধ্যায় কে দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন - শ্রী কৃষ্ণের ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্ত এবং মাঘনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, গোপীদের সাথে দুষ্টুমিষ্টি রাসলীলা, রাধার সাথে কৃষ্ণের তীব্র প্রেম এবং ভক্তিকে ধারণ করে যে বিশ্বাস...এইসমস্ত বিষয়কে চিত্রকরেরা তুলে ধরতেন।
পিচওয়াই চিত্রকলার জন্য বিভিন্ন কৌশল এবং শৈলী ব্যবহার করা হয় যা এই চিত্রকলাকে নিজস্বতা দান করে। যেমন-
ব্লক প্রিন্টিং: এই কৌশলটি কাপড়ের উপর নকশা তৈরি করতে কাঠের ব্লক ব্যবহার করে। ব্লকগুলি প্রাকৃতিক রঞ্জকগুলিতে ডুবানো হয় এবং তারপরে পছন্দসই প্যাটার্ন তৈরি করতে ফেব্রিকের সাহায্যে ডিজাইন তৈরি করা হয়।
হ্যান্ড পেইন্টিং: এই কৌশলটি ফেব্রিকের নকশা আঁকার জন্য প্রাকৃতিক রঙ্গক এবং রঙ ব্যবহার করে। শিল্পীরা জটিল বিবরণ এবং নিদর্শন তৈরি করতে একটি বুরুশ ব্যবহার করেন।
এমব্রয়ডারি: এই কৌশলটি কাপড়ের উপর নকশা তৈরি করতে থ্রেড বা সুতো ব্যবহার করে। নানান ডিজাইন তৈরি করতে থ্রেডগুলি একসাথে বোনা হয়।
কেমন করে আঁকা হয়ে থাকে এই 'পিচওয়াই'? কি কি থাকে এখানে?
শ্রীকৃষ্ণ এর জীবনের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয়বস্তু যেমন পদ্ম ফুল, গরু, ময়ূর ইত্যাদি সব কিছুকেই এই পিচওয়াই চিত্রকলার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। কেবল শ্রীকৃষ্ণের সাথে যুক্ত বলেই নয়! এই বিষয় গুলি বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে। যেমন - ময়ূর এবং পদ্ম হলো সৌন্দর্য, আভিজাত্য ও মহিমার প্রতীক। গরু পবিত্রতা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে নির্দেশ দেয়।
শুধু তাই নয়, বর্তমানে চিত্রকরেরা নানান মুঘল ও রাজস্থানী থিম কেও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে।
একটি পিচওয়াই চিত্রকলায় সাধারণ তুলো বা সিল্কের ক্যানভাসের ব্যবহার বেশি চোখে পরে। প্রয়োজনমতো বাছাই করা ক্যানভাস প্রস্তুত করার জন্য আঠা এবং চকের মিশ্রণ দিয়ে ক্যানভাসটিকে প্রথমে ভালো করে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ক্যানভাসকে শক্তিশালী এবং আঁকার জন্য উপযুক্ত করে তোলে, যা আগত জটিল শিল্পকর্মের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে। এরপর ছবি আঁকার জন্য জন্য একটি রাফ স্কেচ তৈরি করে নেওয়া হয় পেন্সিল বা কাঠকয়লা দিয়ে, যাকে চারকোল স্কেচ ও বলা চলে। এরপর এতে নানান প্রাকৃতিক উৎস থেকে সৃষ্ঠ রঙ প্রদান করা হয়, যা এই চিত্রকলার মধ্যে আরো গভীরতা দান করে।
এই চিত্রকলা বিশেষ হয়ে ওঠার পেছনে একটি বড়ো কারণ হলো আধ্যাত্মিক তাৎপর্যতা। এটি প্রধানত ভগবান কৃষ্ণের জীবনকে চিত্রিত করে, যা প্রধানত হিন্দু ধর্মের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও, এতে ব্যবহৃত প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ রঙ এই চিত্রকলার চাক্ষুষ আবেদন বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে সহজেই এর প্রতি আবেদনকারীরা আকৃষ্ট হন।
এই ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলাটি কেবল ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে তা নয় ! রাজস্থানে বসবাসকারী কিছু অঞ্চলের মানুষদের জীবনধারণ এবং রুজি-রুটির জোগান দেয় এই পিচওয়াই চিত্রকলা। কেবলমাত্র তুলিতে রঙ দিয়ে ক্যানভাসে আঁকার মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়, এই বিশেষ চিত্রকলাকে রাজস্থানী জনগন নিজেদের ভক্তি প্রকাশ করার উপায় হিসেবেও বেছে নিয়েছেন।
তুলি শুধু রঙ কে নয়, মনের ভাবকেও ফুটিয়ে তোলে...
পিচওয়াই চিত্রকলা শুধু ছবিই প্রকাশ করেন, পিচওয়াই চিত্রকলা মনের ভক্তি, আনন্দও আদান প্রদান করে থাকে যা আজকের দিনে হয়তো দুর্লভ তবে দুষ্কর নয়! কারণ, ভারতে কোনোকিছুর অভাব নেই, আনাচে-কানাচে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে এমনই আরো অনেক বিস্ময়কর ইতিহাস...তথ্য...কিংবা, চিত্রকলা !
i admire your writing <3
ReplyDeleteThank you so much ❤️ loved your works also.
Deletekeep it up.. go ahead..... 👍🏻👍🏻👍🏻
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteভালো হয়েছে 👍
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKeep it up
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deletenice work
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteValo hoyeche, well researched.
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deletebesh bhaalo ♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteGirl come with another catchy thing
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKeep Shining 🌟
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👏🏻👌🏻👌🏻❤️❤️❤️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👍
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👍❤️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete