তালপাতার "মিনিয়েচার" !
শিল্প সমাজের আয়নার মতো। এটি একটি স্থানের সংস্কৃতির সূক্ষ্মতা প্রকাশ করে। গান, নাচ, কারুশিল্প এবং চিত্রকলার মতো বৈচিত্র্যময় শিল্পের কারণে ভারত সমস্ত শিল্পপ্রেমীদের আনন্দের প্রতীক। ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্পগুলির মধ্যে একটি হল মিনিয়েচার বা ক্ষুদ্র বা লঘু চিত্রকলা! যা হাজার হাজার অনুভূতি, আবেগ এবং চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার একটি উৎস।
রাজস্থান বা গুজরাটের এই মিনিয়েচার চিত্রকলাকে রাজকীয় চিত্রকলা বললে খুব একটা ভুল কিছু বলা হবেনা ! কারণ, এই চিত্রকলার উদ্ভব হয়েছিল ভারতের মধ্যকালীন যুগে। সেই সময়ের শাহী জীবনযাপনকে মিনিয়েচার চিত্রকরেরা নিজের তুলিতে ফুটিয়ে তুলতেন। আর, এমনভাবেই ফুটিয়ে তুলতেন যে এত হাজার-হাজার বছর পরেও সেই চিত্রকলাগুলিকে দেখলে এখনও নতুন ও বাস্তবসম্মত বলে মনে হবে। ভারতে মিনিয়েচার চিত্রকলার প্রবর্তক হিসেবে বাংলার পালদের কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং পথপ্রদর্শক মনে করা হয়।
কিন্তু মুঘলদের অধীনেই মিনিয়েচার চিত্রকলা শীর্ষে পৌঁছেছিল। 750 খ্রিস্টাব্দের দিকে ভারতে মিনিয়েচার চিত্রকলা বা লঘু চিত্রকলার উদ্ভব ঘটে। তবে, মুঘল সাম্রাজ্যই এই চিত্রকলাকে নতুন রূপ দেয়। মুঘলদের ব্যাপার-স্যাপারই অন্য রকম ছিল। আলিশান কায়-কারবার। বিরাট বিরাট স্থাপনা,রাজাদের জীবনধারা, সাম্রাজ্য, শিকার ইত্যাদি এই সমস্ত বিষয়ের সাথে জুড়ে থাকা কাহিনীগুলিকে এই মিনিয়েচার চিত্রকলার মাধ্যমে দেখানো হত। মুঘল শাসনের উত্থানের সাথে সাথে মিনিয়েচার চিত্রকলার বিকাশ শুরু হয়েছিল, কারণ আকবর শিল্পের অনুরাগী এবং প্রেমিক ছিলেন।
'মিনিয়েচার' চিত্রকলার নামকরন হয়েছে ল্যাটিন শব্দ মিনিয়াম থেকে। যার অর্থ হলো, লাল মেঠো সিঁদুর যা ঐতিহাসিক ভাবে মধ্যযুগে ইউরোপে পুস্তক বা পুস্তি তে রূপরেখার জন্য ব্যবহার করা হতো।
মিনিয়েচার চিত্রকলা যেটি হয়তো আকারের দিক থেকে ছোটো কিন্তু এই চিত্রকলায় প্রতিটি অংশ নিঁখুত ভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। যেমন বলা যায়, কোনো মানব শরীরের মাথার প্রতিটি চুলের অংশ কে ধরে ধরে ডিটেইলিং সহ আঁকা হয়। এছাড়াও, পোশাক-আশাক হোক কিংবা অলংকার থেকে শুরু করে গাছের পাতাও সুন্দর ভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়।
এই চিত্রকলায় মেটেরিয়াল হিসেবে তাল পাতা, হস্ত নির্মিত কাগজ, কাপড়, চামড়া, দেওয়াল, কাঠ ইত্যাদি তে আঁকা হয়ে থাকে। কিন্তু, মিনিয়েচার চিত্রকলার একদম শুরুর দিকে এই চিত্রকলা তালপাতা কিংবা চামড়াতেই আঁকা হয়ে থাকত। সবার প্রথমে এই মিনিয়েচার চিত্রকলা বৌদ্ধ সময়ে তালপাতায় আঁকা হয়েছিলো। যেহেতু এই চিত্রগুলি তাল পাতার উপর তৈরি করা হয়েছিল, তাই স্থান বাঁচাতে তাদের আকার ছোট করতে হয়েছিল। যেহেতু এই চিত্রগুলি আকারে ছোট হয়, তাই এগুলি বহন করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব সহজ।
এই চিত্রকলার মুখ্য বিষয়বস্তুতে মূলত মানবচরিত্র কে দেখানো হয়ে থাকে। যা সাধারণত নারী কেন্দ্রিক হয়। যার গঠন ভঙ্গি হয়...টানা টানা চোখ, তীক্ষ্ণ নাক, সরু কোমর ইত্যাদি কে বিস্তারিত ভাবে এঁকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
এই মিনিয়েচার চিত্রকলা বানানোর জন্য চিত্রকরেরা প্রথমে তাদের প্রয়োজনমতো ক্যানভাস বেছে নেন। তারপর প্রয়োজনমতো সেটির আকার কেটেকুটে ঠিক করেন। তারপর সেই কাগজকে মসৃণ করার জন্য বার্নিশ অর্থাৎ পাথর দিয়ে ঘসেন। এগুলিকে যতটা সম্ভব মসৃণ করা হয়। তারপর সেই ক্যানভাস আঁকার জন্য প্রস্তুত হলে তাতে শিল্পীরা আঁকেন।
তারপর সেই চিত্র বিবরণীকে জলের পাতলা আবরণে ভেজানো হয়। তারপর তার ওপর রঙ করা হয়। তারপর আবার বার্নিশ করা হয় আঁকাতে ডিটেইলিং আনার জন্য। রঙের ক্ষেত্রে মিনিয়েচার চিত্রকলায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া রঙই ব্যবহার করা হয়। যেমন- মাটি, ফুল, ফল, পাথর, খনিজ-ধাতব, শাক-সবজি, নীল গাছ, শাঁখের খোলা এমনকি গোল্ড-সিলভার থেকেও রঙ তৈরি করা হতো।
তুলির জন্যে মিনিয়েচার চিত্রকরেরা উট কিংবা কাঠবেড়ালির লেজের লোম ব্যবহার করতেন। সবশেষে এই চিত্রকলাকে একটি সুন্দর বর্ডার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হতো।
এই সুন্দর চিত্রকলা বানানোর জন্য শিল্পীদের অনেক দিনের...অনেক মাসের পরিশ্রম, সময়, ও উৎকর্ষতা লাগে। পাশাপাশি শিল্পীকে হতে হয় অনেক দক্ষ।
ভারতের গুজরাট, রাজস্থানে এখনো এই মিনিয়েচার চিত্রকলা পরিশ্রমের সাথে বানানো হয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের উপায় মেনে এই মিনিয়েচার চিত্রকলা বানানো হয়ে থাকে। তবে রাজস্থানে তৈরি মিনিয়েচার চিত্রকলা কে রাজপুত চিত্রকলা বলা হয়ে থাকে। এই মিনিয়েচার চিত্রকলার জন্যে ভারতে সাতটি স্কুল রয়েছে সেগুলি হলো -
1.Paul school of miniature painting.
2. Jain school of miniature painting.
3. Mughal school of miniature painting.
4. Rajasthan school of miniature painting.
5. Odissa school of miniature painting.
6. Pahari school of miniature painting.
7. Deccan school of miniature painting.
সর্বশেষে বলা যায়, মিনিয়েচার চিত্রকলাগুলি ভারতের প্রাচীনকালের অতীত দেখায় এবং সেই সময়ের মানুষের যে জীবনধারা এবং রীতিনীতিগুলিকে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেন। বিশেষত, এটি আমাদের ভারতীয় ইতিহাস সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। আমরা মুঘল সাম্রাজ্যের নানান খুঁটিনাটি বিষয়ও জানতে পারি এই চিত্রকলার মাধ্যমে। অন্যদিকে, এটি আমাদের অর্থনীতিতেও সমান ভাবে সাহায্য করে। যেমন... এটি সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়াও,এই মিনিয়েচার চিত্র গুলি বাজারে প্রচুর দামে বিক্রি হয়। এই চিত্রকলা ভারতীয় সংস্কৃতিকে অনন্য এবং আকর্ষণীয়ভাবে সংরক্ষণ এবং চিত্রিত করতে সহায়তা করে...
Valo hoyeche ♥️🙌
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteBesh bhalo♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteWell researched 💚
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteDarun
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete✌️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKeep Shining
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteLove your work
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteResearch level🔥
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub valo 🔥
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteGood
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub bhalo ekta blog hochhe! Keep it up re!♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteanekkichu jante para jay sotti... khub bhalo eibhabei egiye ja aro o janar opekkhay...
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteভালো হয়েছে
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteভালো হয়েছে
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👍
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete