প্রকৃতি-স্বজন "গোন্ড" চিত্রকলা...
এতদিন এত শৈলী, চিত্রকলার ব্যাপারে জেনে এসেছি যেগুলি সাধারণত ঘরসজ্জার জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে, আজকের এই আলোচনা কিন্তু একটু অন্যরকম ! কারণ, যে চিত্রকলা আজ তুলে ধরা হবে সেটি কেবলমাত্র ঘরসজ্জার জন্যই নয় বরং এটি হলো মাটির খুব কাছাকাছি এবং প্রকৃতির এক আপন চিত্রকলা! এক কথায়, প্রকৃতির বন্ধু বলা যেতে পারে। কারণ, এরা একে অপরকে অভূতপূর্নভাবে সাহায্য করে থাকে। সবথেকে বড়ো ব্যাপার হলো, এই চিত্রকলা নিজেদের ঐতিহ্য নিজেরাই বছর কে বছর বহন করে আসছে। জেনে নি সেই সম্পর্কে...
"গোন্ড চিত্রকলা"! এই গোন্ড চিত্রকলা হলো ভারতের গোন্ড উপজাতিদের একটি নিজস্ব শৈলী, যেখানে শুধু চিত্রকলাই থাকেনা! সাথে থাকে লোকনৃত্য,গান,বার্তা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু !
এই চিত্রকলার জন্ম হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। কিন্তু, এই গোন্ড উপজাতির পরিচয় কি?
গোন্ডরা হলো বিশ্বের বৃহত্তম উপজাতিদের মধ্যে অন্যতম একটি উপজাতি। আর, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে শুধু মধ্যপ্রদেশেই নয়! এই গোন্ড উপজাতি নিজেদের বিস্তৃতি লাভ করেছে ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং উরিষাতেও।
এই গোন্ড শব্দটি এসেছে মূলত "কোন্ড" থেকে, যার মানে হলো সবুজ পাহাড়। আর যারা গোন্ড উপজাতির অন্তর্ভুক্ত তাদেরকে বলা হয় গোণ্ডি!
কিন্তু, এই গোন্ড চিত্রকলা হয় কেমন?
প্রকৃতির কোল থেকে নানান উপাদান নিয়ে সেগুলিকে রঙ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের বাড়ির জানালা, হল, উঠোন, আঙিনা, দেওয়াল এছাড়াও আবাসনের অভ্যন্তরেও আঁকা-আঁকি করা হতো এবং সেগুলিকে কিছু বিন্দু, সরলরেখা, ড্যাশের মতন মৌলিক প্যাটার্ন এর দ্বারা এমনভাবেই আঁকা হত যেটা দেখে মনে হতো যে ছবি চলমান !
এই গোন্ড চিত্রকলার মধ্যে রয়েছে হালকা শহুরে সংস্কৃতির ধাঁচ সহ রয়েছে গ্রামেরও সংস্কৃতির ছোঁয়া! এছাড়াও, অন্যান্য চিত্রকলার মতনও এই চিত্রকলাও মাটিকে ছুঁয়ে থাকলেও, বলা যায় যে এই চিত্রকলা প্রকৃতির অনেকটাই কাছের। বিষয়বস্তুর মধ্যে থাকে উদ্ভিদ,পশু-প্রাণী যেমন...ময়ূর, পাখি, কাঁকড়া, সিংহ, বাঘ, হরিণ, সাপ, বন্য শুকর, গরু, বানর, হাতি, ঘোড়া, মাছ ইত্যাদির ছবি। এছাড়াও, এই ধরণের চিত্রকলায় থাকে এক অনন্য ধর্মীয় অনুভূতি! লোককাহিনী, পুরাণ সহ দেবী কালি, ভগবান শিব-কৃষ্ণ-গণেশ...সকলকেই ফুটিয়ে তোলা হয় এই চিত্রকলায়। তবে, গোন্ড চিত্রকলা কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে শুধু প্রকৃতিকেই ফুটিয়ে তুলতে চায়! কারণ, শিল্পীরা মনে করেন যে মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে এক অনন্য মেলবন্ধন ! আর চিত্রকলা সেই মেলবন্ধন এবং প্রকৃতির যে সারাংশ তাকে উজ্জ্বলভাবে চিত্রিত করে। যেমন বলা চলে যে, এই ধরণের চিত্রকলা তে আমরা যেমন দেখতে পাবো এক বিশালাকার হাতি সাথে একটা ছোট্ট ফুলও দেখতে পাবো। আসলে এই চিত্রকলা চিত্রকরদের এক স্বপ্ন কিংবা কল্পনা জগতের প্রতিফলন বলা চলে কারণ সেখানে দেখা যায় মানুষ, পশু, পাখি, গাছপালা ইত্যাদি সবাই একসাথেই থাকে...একসাথেই বসবাস করে...সহবস্থান করে একসাথেই !
তাই বলা যায় যে, এই চিত্রকলা যতই সুন্দর হোক, আকর্ষণীয় হোক কিংবা বিনোদনমূলকই হোক না কেনো...এগুলির পাশাপাশি এই চিত্রকলা এবং চিত্রকরেরা মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে নিজেদের শিল্পসত্ত্বার মাধ্যমে।
এই গোন্ড চিত্রকলার ক্ষেত্রেও রঙ তৈরি করা হয় প্রাকৃতিক সব বিষয় থেকে ! যেমন- কাঠকয়লা, গোবর, পাতা আরো কত কী! দেখতে গেলে, মাটির একদমই কাছাকাছি থাকতে চায় এই "গোন্ড"! নীচে কয়েকটা রঙের নাম উল্লেখ করা হল -
কালো রঙের জন্য কাঠকয়লা, হলুদ রঙের জন্য রামরাজ নামের মাটি, চুই মাটির থেকে সাদা রঙ, গেরুর মাটির থেকে লাল রঙ, হালকা সবুজ রং তৈরি হয় গোবর থেকে এবং গাঢ় সবুজ রঙ তৈরি হয় শিমের পাতা থেকে। এইরকমই আরো নানান রঙ তৈরি করা হয় প্রকৃতির কোল থেকেই...
তবে, গোন্ডরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী! গোন্ড উপজাতির মানুষদের জীবনধারা সংরক্ষণে তারা আজ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ আধুনিকীকরণ, নতুন প্রজন্মের সংস্কৃতির প্রভাব গোন্ড উপজাতির তরুণ প্রজন্মকে তাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং অনুশীলন থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। গোন্ড উপজাতি, অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মতো, আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখিও হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের সীমিত উপস্থিতি তাদের এগিয়ে যাওয়াতে বাধা দিচ্ছে ।এছাড়া ভূমি অধিকার গোন্ড উপজাতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে তাদের পৈতৃক জমি জোরপূর্বক দখল তাদের জীবনযাত্রাকে বিপদের মুখে ফেলেছে। কথা হলো যে, শিল্পীই যদি না থাকে তাহলে শিল্প বাঁচবে কি করে? শিল্পী ছাড়া যে শিল্প অচল ! বিশেষত আদিবাসী-উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রদত্ত শিল্পের ক্ষেত্রে এই কথাটা অনেকটাই প্রযোজ্য। কারণ, তারা নিজেদের শিল্পকে ঠিকঠাক সমাজে ব্যক্ত করতে পারেন না ! তবে, বছরের পর বছর ধরে, এই চিত্রকলা প্রচুর বহুমুখিতা দেখিয়েছে এবং অনেক দূরও এগিয়েছে। ফলে বর্তমানে সরকারও এখনএসব চিত্রকর্ম সংরক্ষণ ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আমরা জানি যে, কোনো শিল্পই একা লড়ে যেতে পারেনা। তার দরকার হয় কিছু শিল্পীর। আর সেই শিল্পীই ঐতিহ্যগতভাবে সেই শিল্পকে তাদের আশেপাশের সাথে আত্ম-প্রকাশ এবং মিথস্ক্রিয়া করার মাধ্যম বাঁচিয়ে রাখে। এই ঐতিহ্যে নামক সম্পদ হলো অনেকটা এই রকম যে, নাতনি কোনো এক আগেকার দিনের রান্নার রেসিপি যা হয়তো এখন সেভাবে খুব একটা প্রচলিত নয়, সেটি তার ঠাকুমার কাছ থেকে শিখে নিলো। অর্থাৎ, এক পরম্পরা বিকশিত হলো। এছারাও, একবিংশ শতাব্দীর জমানায় এসেও এই গোন্ড চিত্রকলা কে বাঁচিয়ে রাখতে শিল্পীরা আরো বিকল্প পথেও হাঁটছেন যেমন নানা ধরণের ফ্যাশনেবল ক্রিয়াকলাপের সাথে এই শিল্পের মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন। বিভিন্ন ধরণের শাড়ি, কুর্তী, জামা, ব্যাগ ইত্যাদি জিনিসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে !
সুতরাং বলা চলে যে, এই চিত্রকলার লক্ষ্য প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা এবং পরিবেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছড়িয়ে দেওয়া, শুধু চিত্রকলার পদ্ধতি নয়।
ফলস্বরূপ, আপনি কেবল একটি গোন্ড চিত্রের দিকে তাকাচ্ছেন না, আপনি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার দেখছেন...
besh bhalo laglo egulo jeneo....
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteএগুলো আগে শুধু দেখতাম, জানতাম না এগুলোর ব্যাপারে কিছুই। সব আর্ট একই লাগতো। তোমার ব্লগ গুলো পরে পার্থক্য জানতে পারছি
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteখুব ভালো লিখছিস রে। ♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteSundor 💗
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteSundor
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteNicee 💛
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKeep it up💕
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteSundor ❤
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteBesh bhalo ♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub khub valo
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteSundor hoye6e khoob
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteOnek kichu jante parlam
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteLoved it
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete