রাজস্থানের ঐতিহ্য "ফাঁদ"!
উত্তর ভারতে অবস্থিত স্থল বেষ্টিত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে পূর্ণ রাজকীয় রাজস্থান হলো বৈচিত্রপূর্ণ এক শহর। একদিকে দেখা যায় মরুভূমির সোনালী বালি অপরদিকে দেখা যায় বালির দানা ছাড়াই সবুজ গাছপালার সমাহার। এই রাজাদের শহর থেকেই উঠে এসেছে প্রাচীনকালের এক চিত্রকলা 'ফাঁদ'! যেটি কিনা অন্যান্য চিত্রকলা থেকে একটু ভিন্ন ধরনের! একটি খাদি কাপড়ের উপর লম্বা আয়তাকার পেইন্টিং যা গাঢ় রং ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এবং যেখানে দেবদেবীদের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়। এই চিত্রগুলি মূলত গ্রামবাসীদের জন্য একটি বিনোদনমূলক সন্ধ্যা তৈরি করতো যেখানে নাচ-গানের মাধ্যমে পৌরাণিক কাব্যগুলিকে তুলে ধরা হতো। সুতরাং আজকের ব্লগে জেনে নেবো রাজস্থানের ঐতিহ্য "ফাঁদ"।
রাজস্থানের লোক-দেবদেবীদের এছাড়াও রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, মহাবীরের জীবন নিয়ে দীর্ঘ কাপড় বা ক্যানভাসে উদ্ভিজ্জ রঙ দিয়ে আঁকা হয়ে থাকে এই "ফাঁদ" চিত্রকলায়। রাজস্থানের মহাপুড়া এবং ভিলপুড়ার যোশী পরিবারগুলি গত দুই শতাব্দী ধরে এই লোকশিল্পের ঐতিহ্যবাহী শিল্পী হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে শ্রীলাল যোশী, পার্বতী যোশী, নন্দ কিশোর যোশী, প্রদীপ মুখার্জি, ঘনশ্যাম যোশী প্রমুখ ফাঁদ চিত্রকরেরা সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রখ্যাত শিল্পী। এনাদের মধ্যেই চিত্রকর শ্রীলাল যোশী ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন।
এই ফাঁদ চিত্রকলার কাপড় বা ক্যানভাসের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ হয়ে থাকে ৫ ফুট থেকে ৩০ ফুট অব্দি। অর্থাৎ যথেষ্ট বড়ো মাপের কাপড়ে বা ক্যানভাসের মধ্যে এই চিত্রকলা আঁকা হয়ে থাকে এবং এই চিত্রকলাতেও প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বলা হয় যে এই "ফাঁদ" কথাটি সংষ্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এবং, রাজস্থানি উপভাষায় এই ফাঁদের অর্থ হলো ভাঁজ। কথিত আছে যে এই ফাঁদ চিত্রকলা নাকি শুধুমাত্র সূর্যাস্তের পরেই খোলা হয়ে থাকে। যে চিত্রশিল্পীরা এই ফাড় চিত্রকলার সাথে জড়িত তাদেরকে বলা হয়ে থাকে "ফড় চিত্রশিল্পী"।
ফাঁদ সবার থেকে আলাদা কেনো?
এই ফাঁদ চিত্রকলা কিন্তু অন্যান্য ভারতীয় চিত্রকলার থেকে ভিন্ন। কারণ, এই চিত্রগুলি দর্শকের দিক বরাবর হয়না, বরং একে অপরের মুখ বরাবর হয়ে থাকে। এছাড়াও, আমরা যদি ভালো করে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতেই পারবো যে এই ধরণের চিত্রকলায় একটুও ফাঁক দেওয়া হয়না, সারা ক্যানভাস জুড়েই আঁকা হয়ে থাকে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ফাঁদ চিত্রকলা হলো স্ক্রোল অর্থাৎ মুড়িয়ে খোলা হয় এমন। এই চিত্রকলার ক্ষেত্রে যে কাপড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা সাধারণত খাদি বা সুতির হয়ে থাকে। কাপড়ে আঁকার আগের রাতে সেই কাপড়কে জলে ভেজানো হয়ে থাকে। তারপর সেটিকে সিদ্ধ করা আটা ও ময়দা মিশ্রিত জলে শোধন করা হয়। তারপর সূর্যের রোদে শুকানো হয়। এই শুকনো কাপড়টি তারপরে একটি মুনস্টোন (এক ধরনের মুক্ত) দিয়ে ঘষে কাপড়টিকে মসৃণ করা হয়, যা এটিকে একটি উজ্জ্বলতা দেয়। কাছাকাছি পাহাড় এবং নদীর তীর থেকে সংগ্রহ করা পাথর থেকে নির্দিষ্ট রং পাওয়া যায়। রঙ তৈরির প্রক্রিয়াটি একটি ক্লান্তিকর এবং কখনও কখনও, এই পাথরগুলি থেকে রং প্রস্তুত করতে 2 মাস পর্যন্ত সময় লাগে৷ সুতরাং ফাঁদ শিল্পীদের অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে, অবলম্বন করতে হয় নানান কৌশল।
রঙ প্রধানত লাল, হলুদ এবং সবুজ নিয়ে গঠিত।এছাড়াও, গল্পের চরিত্র, কাহিনী অনুযায়ী রঙের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।গল্পের চিত্রিত চরিত্রের ব্যক্তিত্ব, চেহারা এবং কাজের ভূমিকার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অঙ্গ ও ধড়ের জন্য কমলা রঙ, অলঙ্কার - পোশাক এবং নকশার জন্য হলুদ, কাঠামোর জন্য ধূসর, জল এবং পর্দার জন্য নীল, গাছ ও গাছপালাগুলির জন্য সবুজ এবং পোশাকের জন্য লাল ব্যবহৃত হয়।বলে রাখা ভালো যে, এই চিত্রকলাও ঐতিহ্যগত ভাবে মহিলাদের দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে।
আজ ফাঁদ কোথায়?
তবে, ফাঁদ চিত্রকলা এতোটাও বিস্তৃত হতো না। এর পিছনেও রয়েছে কিছু অজানা কথা! এই ফাঁদ চিত্রকলা শুধুমাত্র যোশী পরিবারের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। একচেটিয়া ও গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য, শিল্পটি পরিবারের মেয়েদের কাছে নয়, পুত্রবধূদের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে যখন শিল্পীদের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে, তখন যোশী পরিবারের প্রধান এই শিল্পকে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে, বর্তমানে যদিও মাত্র কয়েকজন কারিগর আজ পেশাগতভাবে ফাঁদ চিত্রকলার সাথে যুক্ত। অনেকে শখের বশে এটিকে গ্রহণ করেছে এবং পেইন্টিং তৈরির ঐতিহ্যগত পদ্ধতি অনুসরণ করে চলেছে।
অতীতের এমন মহান শৈল্পিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা আজকের বিশ্বে প্রয়োজন। এর নান্দনিক আবেদন ছাড়াও, ফাঁদের মতো চিত্রকলার যে ইতিহাস, লোককাহিনী এবং গল্পগুলিকে তুলে ধরা উচিত যা ভারতের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে তুলির টানে ধরে রেখেছে, আর রাখবেও...
besh bhaalo ♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete❤️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub bhalo
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteNoice :)
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKeep Shining vmro
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteWell researched 🫂
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteIn knowledge perspective, it was enlightening, keep up the good work ✌️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete❤️❤️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub bhalo re!♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteSundor ❤
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteKhub bhalo ♥️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deletekhoob bhaalo laaglo abaro eto kichu jene...
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteখুব সুন্দর
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Deleteদারুণ 🤩
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👏👏
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete❤️❤️
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteEr bishoye jaantami nh thank you onak ki6u jaanten prlam
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteVery very good
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
DeleteNice information
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete👍
ReplyDeleteThank you so much ! ❤️
Delete